মেঘালয়ের অবৈধ খাদানে উদ্ধার অভিযান শুরু, শ্রমিকদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ
শিলচর, ২ জুনঃ চার দিন পর অবশেষে বুধবার ক্লেরিয়াটের কয়লা খাদানে শুরু হয়েছে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযান। তবে যে ১৪ জনের মতো শ্রমিক সেই অবৈধ কয়লা খাদানের গভীরে গিয়াছিলেন তাদের মধ্যে যারা আটকে পড়েছিলেন তাদের কারও জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। মেঘালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৫ জনের ওই খাদানে আটকে থাকার কথা বলা হলেও এযাবৎ তাদেরও খোঁজ নেই।
মঙ্গলবার ক্লেরিয়াট জেলা প্রশাসন ঘটনাটি নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু করলেও এনিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ধরা পড়েছে। জানা গেছে, এদিন বিকেল থেকে সরকারি বাহিনী উদ্ধার কাজের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আদৌ কোনও হাত পড়েনি। তাছাড়া গোটা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এদিকে, ছেলের লাশ দেখতে আবারও উভয় রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন কাটিগড়ার দুর্ভাগা আনোয়ারুল ইসলাম বড়ভুইয়ার পরিবার।
গত রবিবার দুপুরে মেঘালয়ের পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলার ক্লেরিয়াটের নিকটবর্তী উম্পলেং বস্তির কয়লা খাদানে এক বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে। বেসরকারি তথ্য মতে সেদিন ওই খাদানের ভেতর কয়লা সংগ্রহ করতে ঢুকেছিলেন ১৪ জন শ্রমিক। বদরপুর বরথল এলাকার নিজাম উদ্দিন ওরফে নিজাম আলি নামের এক সর্দারের তত্বাবধানে ছিলেন শ্রমিক দলটি। জানা যায়, ১৪ জনের মধ্যে অনেকই দুর্ঘটনার আঁচ পেয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে বেরিয়ে আসা কোনও শ্রমিকেরই এখন সন্ধান নেই। একটি সুত্র বলছে, গোটা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে শুরু থেকেই একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। মেঘালয়ের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ওই খাদানের মালিক। তিনিই সবকিছুকে ম্যানেজ করে সাক্ষী সাবুত লোপাট করতে অন্যান্য শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া সোমবার সকাল হওয়ার আগেই ওই কয়লা খনির পাশে থাকা শ্রমিকদের তাঁবু সহ সব ধরনের সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও মেঘালয়ে যে এখনও বেআইনি ভাবে কয়লা উত্তোলন চলছে, তা প্রমাণ হওয়ার ভয়ে যাবতীয় তথ্য লুকোনোর সব চেষ্টা অব্যাহত আছে। ফলে ওই খাদানে কর্মরত কোনও শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মিলছে না সঠিক সংখ্যাও।
ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলসের এসপি-র হিসেব মতে ওই ঘটনায় ৫ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন। এঁদের উদ্ধার অভিযান চলছে। কিন্তু একই জেলার সাধারণ প্রশাসনের এক সরকারি বিজ্ঞপ্তি কিন্তু অন্য কথা বলছে। ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস এর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম এস সাংমা এক নোটিশ জারি করে বলেন, উম্পলেং বস্তিতে যে ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে তা যদি সত্য হয় তবে জেলা প্রশাসনের কাছে এসে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সাক্ষ্য দিতে পারবেন। অর্থাৎ পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও সাধারণ প্রশাসন তা স্বীকার করছে না। ‘যদি ঘটে থাকে’ বলে তারা বিবৃতি জারি করেছে। দুই বিভাগের ওই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য থেকেও বিষয়টি নিয়ে মেঘালয় সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দিচ্ছে।
আরো দেখুন : দুই কাগজ কল সহ গোটা এইচপিসি বিক্রি করছে সরকার, নিলামে দাম ১১৩৯ কোটি