শিলচর, ১৪ আগস্ট: অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়ন কমিটির রিপোর্ট জনসমক্ষে ফাঁস করা নিয়ে সারা অসম ছাত্র সংস্থার (আসু) বিরুদ্ধে সরব হলেন গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী প্রদীপ দত্তরায়। তিনি আসু-র এই কাজকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন।এদিন শিলচরে দত্তরায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিপ্লব শর্মার নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি হাইপাওয়ার কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটি যথাসময়ে তাদের প্রতিবেদন অসম সরকারের কাছে দাখিল করে। পরবর্তীতে অসম সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওই প্রতিবেদন পাঠিয়েও দিয়েছে। সেই রিপোর্টে কী বলা হয়েছে তা এখনও অসম তথা ভারতবর্ষের মানুষ জানেন না। কিন্তু সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু) কী করে এই রিপোর্ট জনসমক্ষে পেশ করতে সক্ষম হল? তা অত্যন্ত বিস্ময়কর বলেও তিনি উল্লেখ করেন।ছাত্র সংস্থা আকসা-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা আইনজীবী প্রদীপ দত্তরায় বলেন, সরকারের কাজের অঙ্গ হিসেবে কোনও ক্ষমতাসীন কমিটির রিপোর্ট আগেভাগে অনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে এনে আসু আইন বিরোধী কাজ করেছে। তাই আসু-র বিরুদ্ধে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার জোরালো দাবি জানাচ্ছেন তিনি।
অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ চাকরি অসমিয়াদের জন্য সুরক্ষিত থাকবে এবং অসমের জমিজমা, বাড়িঘর অসমিয়া ছাড়া কেউ ক্রয় করতে পারবেন না। এমন শর্তাবলির বিরোধিতা করেছেন প্রদীপ দত্তরায়। কারণ, ১১ সদস্যের কমিটি কিন্তু সুপ্রিম অথরিটি নয়। যতক্ষণ না-কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার একে গ্রহণ করছে। তাই আসু-র এ সব কথা বলা যুক্তিহীন। আসলে আসু চাইছে অসমিয়া এবং বাঙালি, হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি করতে। আসু রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলছে, এটা ২০২১-এর নির্বাচনে ফায়দা তোলার জন্য অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদের সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলার চেষ্টা বলেও মনে করেন তিনি।দত্তরায় বলেন, ‘অসমে বাঙালি ৩০ শতাংশ। তাই চাকরির জন্য যদি সংরক্ষণ থাকতেই হয় তা হলে বাঙালিকে ৩০ শতাংশ চাকরি দিতে হবে। এটা ন্যায্য দাবি। অসম হল বহুভাষিক রাজ্য। অসমে কেবল অসমিয়াদের বাস নয়। এখানে বাঙালির পাশাপাশি বড়োরা ৫০০ বছর ধরে রাজত্ব করছেন, আহোম রয়েছে, মিসিং রয়েছে, ডিমাসা রয়েছে, রয়েছে মণিপুরি, নেপালিও। এতসব জনসংখ্যার মধ্যে শুধু অসমিয়াদের জন্য ৮০ শতাংশ চাকরির দাবি সম্পূর্ণ অনৈতিক দাবি। এই দাবিকে কোনও অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, অসম সরকার ইতিমধ্যেই অসমিয়াদের জন্য ৮০ শতাংশ চাকরি বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন আসু-র বক্তব্য ভিত্তিহীন। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু অসমে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিভাগে চাকরি হয়েছে। সেখানে একজন বাঙালিও চাকরি পায়নি। এর জবাব সরকারের কাছে দাবি করেছেন প্রদীপ। তিনি অসম সরকারের বাঙালিদের সঙ্গে সর্ববিষয়ে বঞ্চনা করেই চলেছে বলে অভিযোগ করেন।