প্রদীপ দত্তরায়
শিলচর, ১২ আগস্ট : সিন্ডিকেট চক্রের কবলে সম্পূর্ণ ডুবে আছে বরাক উপত্যকা। এবার করোনা-কেন্দ্রিক কালো ব্যবসার জাল ফাঁদা হয়েছে। কয়লা, বার্মিজ সুপারি, পুস্ত, বালু-পাথর, কাঠ প্রভৃতির জাঁকজমক অবৈধ ব্যবসার ইতিবৃত্ত সর্বজনবিদিত বিষয়। এবার নতুন করে সংযোজন হয়েছে করোনা সিন্ডিকেট।বর্তমানে করোনা সিন্ডিকেটের নামে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে শিলচরে। প্রত্যেক করোনা রোগীর জন্য দেড় লক্ষ টাকা করে মঞ্জুর হয়। অথচ একজনের পিছনে ৫০ হাজার টাকাও খরচ হয় না। রোগীদের যে ধরনের খাবার দেওয়া হচ্ছে বা থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বাথরুমগুলো এতই অপরিচ্ছন্ন যেখানে রোগীর যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এতে রোগীরা আরও অসুস্থ হচ্ছেন। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করার পরও এর কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।
করোনা সিন্ডিকেট চলছে একটি বিশাল চক্রের মাধ্যমে। এই করোনা সিন্ডিকেটে একাংশ আমলা, চিকিৎসক, ঠিকাদার জড়িত রয়েছেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর গুপ্ত এবং হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. অভিজিত্ স্বামী অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ। তাঁদের সততা এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে ওইসব ঠিকাদার আমলা এবং একাংশ চিকিৎসক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এঁদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে গোটা স্বাস্থ্য বিভাগ পঙ্গু হয়ে যাবে। করোনা রোগীদের সীমাহীন কষ্টের মাত্রা উপলব্ধি করে সরকার এখন বলছে বাড়িতেই রোগীরা থাকতে পারবেন। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিউ-র সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। এছাড়া শিলচরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই চিকিৎসার জন্য।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্তবিশ্ব শর্মা শিলচরে এসে বলেছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে ১ হাজার বেডের কোভিড কেয়ার সেন্টার করা হবে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হবে। এছাড়া শিলচরে ৩০০ শয্যার একটি কোভিড হাসপাতাল করা হবে। যার জন্য জায়গা দেখে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা এসে বলেছিলেন করিমগঞ্জেও ১০০০ শয্যার আরও একটি কোভিড কেয়ার সেন্টার হবে। কিন্তু বাস্তবে এখনও কিছুই হয়নি। শোনা যাচ্ছে, আগামী ১৪ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্তবিশ্ব শর্মা শিলচর আসছেন। তাঁর কাছে আমার প্রশ্ন, শিলচর ডিএসএতে হাজার শয্যার কোভিড কেয়ার সেন্টার এবং ৩০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল কখন হবে? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব যেন দিয়ে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জবাব না দিলে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার প্রতি আস্থা হারাবেন বরাকবাসী।
এছাড়া বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় নিজে একজন চিকিৎসক, তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল একজন কার্ডিওলজিস্ট এবং নিউরোলজিস্ট নেই। শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছেন না, বিষয়টা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং বরাকবাসীর কাছে সাংসদের অক্ষমতাও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫০ বছরের পুরনো এই মেডিক্যাল কলেজও পাঁচগ্রাম পেপার মিল এবং আনিপুরের চরগোলা সুগার মিলের মতো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।তাই উপত্যকার জনগণের স্বাস্থ্য পরিষেবার একমাত্র ভরসা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে বাঁচাতে সর্বশ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
প্রদীপ দত্তরায়, আকসা-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা উপদেষ্টা এবং গুয়াহাটি উচ্চ আদালতের আইনজীবী।