25 C
Guwahati
Wednesday, March 29, 2023
More

    সঙ্গীত শিল্পী আনন্দময়ী ভট্টাচার্য প্রয়াত, শোকস্তব্ধ সংস্কৃতি মহল

    সঙ্গীত শিল্পী আনন্দময়ী ভট্টাচার্য প্রয়াত, শোকস্তব্ধ সংস্কৃতি মহল

    শিলচর, ২৩ মার্চ : যেন সত্যিকার অর্থেই ‘রোদন ভরা এ বসন্ত’! ঠিক ৪ বছর আগে এমনই এক বসন্তে চলে গিয়েছিলেন তাঁর ভাইপো স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য। চার বছর পর এই বসন্তে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনিও। তিনি এই উপত্যকার সঙ্গীতের রত্নভাণ্ডার, যশস্বী সঙ্গীত বোদ্ধা আনন্দময়ী ভট্টাচার্য। সোমবার রাত ৯-৫৫ মিনিটে শিলচর সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে ৯১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অকৃতদার এই শিল্পী। তাঁর মৃত্যুতে বরাকের সঙ্গীত জগতে নক্ষত্র পতন হয়েছে বলে মনে করছে শিল্প-সংস্কৃতি মহল। পরিবার সূত্রের খবর, রাতেই শিলচর শ্মশানঘাটে সম্পন্ন হয়েছে আনন্দময়ী ভট্টাচার্যের শেষকৃত্য। 

    এ অঞ্চলের বিখ্যাত কবিরাজ প্রয়াত কালীজয় ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁর বাবা। যিনি ন্যায়পঞ্চানন নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। মা প্রয়াত মানদাসুন্দরী দেবী। ৫ বোন ও ৬ ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন আনন্দময়ী ভট্টাচার্য। তিনি শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের আমৃত্যু অধ্যক্ষা। একসময় চাকরি করতেন শিলচর ডিএনএনকে স্কুলে। সেখান থেকেই  সঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবে অবসর নেন। পরবর্তীতে অকৃতদার এই শিল্পীর সময়-দেয়ালের সিংহভাগ জুড়ে চিত্রিত ছিল শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় ঘিরে আবর্তিত হয়েছে তাঁর পরবর্তী সঙ্গীত জীবন। এখান থেকেই তিনি সঙ্গীতের শেকড় বিস্তার ঘটিয়েছেন, জ্বেলেছেন অগুনতি গান-মশাল। কে নেই এই তালিকায়? ভাইপো কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য তো ছিলেনই। এরপরই যাঁর নাম উঠে আসে তিনি শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। এছাড়া সুদীপ্ত চক্রবর্তী থেকে শুরু করে নবীনপ্রবীণ অনেকেই তাঁর কাছে তালিম নিয়েছেন। সঙ্গীতচর্চায় অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য  তিনি রাজ্য সরকারের শিল্পী পেনশন তো পেয়েছিলেন-ই, সমাদৃত হয়েছিলেন পশ্চিম বঙ্গেও। কলকাতার যাদবপুরে গিয়ে সঙ্গীতের উপর বক্তৃতা রেখেছেন বেশ ক’বার। লোকসঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত, ক্ল্যাসিক্যাল সব ধরনের গানে তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। বরাক উপত্যকার সঙ্গীতের এমন কোনও ধারা নেই, যা তিনি জানতেন না। মাঘব্রত, সূর্যব্রত, দোল, দুর্গাপূজার গান  —সব গানেই ছিল তাঁর অদ্ভুত দখল। আর সংগ্রহের কথা? অনেকের কাছেই সে ছিল এক অপার বিস্ময়! ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে একের পর এক গান পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর কণ্ঠমাধুর্য, স্বরপ্রক্ষেপনে নিয়ন্ত্রণ—সব কিছুই ছিল  উত্তর প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় ব্যাপার। 

    জানা যায়, ৬১-র ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিচালনার দু-একদিন পর শহিদদের নিয়ে প্রথম গানটি গেয়েছিলেন তিনিই। সেদিন ‘ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই’ গানটির সঙ্গে পদযাত্রায় পা মিলিয়েছিলেন অগণিত মানুষ। গানের কথা ও সুরারোপ করেছিলেন আনন্দময়ী ভট্টাচার্যের তুতোভাই শ্যামাপদ ভট্টাচার্য। তিনি অনেকগুলি গানের ক্যাসেট (লোকসঙ্গীত ও মাতৃসঙ্গীত) করেছিলেন। যেগুলি ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে, প্রশংসা কুড়িয়েছে সঙ্গীতবোদ্ধা মহলের।  এহেন শিল্পীর মৃত্যু’র খবরে উপত্যকার সংস্কৃতি মহল শোকাহত। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাতেই তাঁর সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন অনেকেই। ছিলেন তমালকান্তি বণিক, রাজীব কর, ভাস্কর দাস, দেবাঞ্জন মুখার্জি, দেবব্রত চক্রবর্তী, অনিমেষ দেব, সুদর্শন গুপ্ত, সন্তোষ চন্দ প্রমুখ।

    আরো দেখুন : মাদ্রাসা বন্ধ হলেও রাজ্যের সংস্কৃত টোল বন্ধ হচ্ছে না : কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী

    Published:

    Follow TIME8.IN on TWITTER, INSTAGRAM, FACEBOOK and on YOUTUBE to stay in the know with what’s happening in the world around you – in real time

    First published

    ট্ৰেণ্ডিং