লকডাউনের বাংলাদেশে একদিনে শতাধিক মৃত্যু, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল : করোনা প্রার্দুভাবের ৪০৫তম দিনে বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ ১০১ জনের মৃত্যুর হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৮২ জন। ১৮ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ৪১৭ জন শনাক্ত হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ১ হাজার ৭৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ্ হয়েছেন ৫ হাজার ৬৯৪ জন। মোট সুস্থতার সংখ্যা ৬ লাখ ২ হাজার ৯০৮ জন। মৃত ১০১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৯ জন। চট্টগ্রাম ২০, রাজশাহীতে ৩, খুলনায় ৫, বরিশাল ৪, সিলেট ১ জন, রংপুর ৬ জন ও ময়মনসিংহ ৩ জন। এ পর্যন্ত মৃত ১০ হাজার ১৮২ জনের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৫৬৬ জন এবং নারী ২ হাজার ৬১৬ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ দেশে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আক্রান্তদের সবচেয়ে বেশি ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর। সংখ্যার হিসাবে তা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৪ জন। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশের (১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫) বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৭ দশমিক ১ শতাংশ বা ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৯ জন।
শনাক্ত রোগীদের ২ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১০ বছরের কম। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের ১১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত আক্রান্তর সংখ্যা ৭ লাখ। তার মধ্যে প্রায় ৪ লাখই যুবক। তাদের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর মৃত ১০ হাজার ৮১জনের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি মানুষের বয়স পঞ্চাশ বছরের ওপরে। এ অবস্থায় নতুন তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই যুবক। মৃত্যু দিক দিয়ে বয়স্ক মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ির বাইরে যুবকদের চলাচল বেশি। তাই আক্রান্তর সংখ্যাও বেশি। শারীরিক জটিলতার কারণে বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।
গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হবার পর থেকে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে অধিকাংশই ছিলো বয়স্ক মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে তাই বলছে। কিন্তু এরই মধ্যে এক বছর অতিক্রম করেছে মহামারীকাল। চলতি বছরের শুরুতে করোনার সংক্রমণ হার ২% এর কাছাকাছি চলে আসে। আর তখনই শুরু হয় মানুষের লাগামহীন চলাফেরা। বাংলাদেশের কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেটসহ এমন কোন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র ছিলা না, যেখানে উপছে মানুষের ভিড় ছিলো না। কক্সবাজারে পর্যটকের এতোটাই চাপ ছিলো যে, থাকার জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশ এবং গাছ তলায় রাত কাটাতে হয়েছে।
মার্চ মাসের প্রথম দিকে করোনার গ্রাফ উর্ধমুখি হতে শুরু করে। শুরু হয়ে যায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রতিযোগিতা। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে শনাক্তর হার। রাস্তায় শোনা যায় অ্যাম্বুলেন্সের পিলে চমকালো সাইরেন। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল। কোথাও মিলছে না একটি বিছানা। এমন পরিস্থিতিতে লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন বিশেষজ্ঞ চিতিকৎসকরা। প্রাথমিক অবস্থায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই চেষ্টা ভেস্তে যায়। গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট কার সহ সকল প্রকারের যানবাহন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায়।
কার্যত এক সপ্তাহের লকডাউন ব্যর্থ। এবারে ১৪ থেকে এক সপ্তাহের সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউনে রাস্তায় চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পাস প্রয়োজন হচ্ছে। রাস্তায় কেউ চলতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ছেন। মুভমেন্ট পাস দেখাতে ব্যর্থদের জরিমানা করে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরো দেখুন : কোভিড আক্রান্ত নন, তবু ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইসোলেশনে সুস্মিতা