মনোজ মোহান্তি, নিভিয়া
ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মার রাতাবাড়ি সফরের পর প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে রাতাবাড়ির প্রান্তে প্রান্তে চলছে জোর চর্চা। যদিও রাজ্যের সেকেণ্ড ইন কমান্ড ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাতাবাড়িতে এসেছিলেন রামকৃষ্ণ নগরে বরাকের সর্ববৃহৎ প্রেক্ষাগৃহ সহ কয়েকটি সড়কের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে। দীর্ঘদিন থেকে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি চাপা পড়ে রয়েছিল। হয়তো এবারও মন্ত্রী এ নিয়ে মুখ খোলতেন না । কিন্তু উনার আসার প্রাক মূহুর্তে ২০১৬ সনের উনার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে রাতাবাড়ির মানুষ তাদের প্রাপ্য মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে আশাবাদী বলে টাইম8 বাংলায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল । এতে বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ডঃ শর্মা রাতাবাড়ির মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা উপলব্ধি করে মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে মুখ খুললেও কৌশলী মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দিয়ে গেছেন বলে সচেতন মহলের বক্তব্য ।
২০১৬ র নির্বাচনী প্রচারে এসে বিজেপির তৎকালীন সর্ব ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের উপস্থিতিতে দুল্লভছড়া পাতি ময়দানের নির্বাচনী সভায় হিমন্ত ঘোষণা করেছিলেন, কৃপানাথ মালাহ রেকর্ড ভোটে জয়ী হলে তিনি রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজে স্থাপন করবেন । ফলে রাতাবাড়ির মানুষ তাঁহার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃপানাথ মালাহ কে রেকর্ড ভোটে জয়ী করেন । পরবর্তীতে ডঃ শর্মা তাঁহাকে করিমগঞ্জের সাংসদ প্রার্থী হিসেবে প্রক্ষেপ করায় রাতাবাড়ির মানুষ সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে তাঁহার পক্ষে দাঁড়ান। শুধু তাই নয় উপনির্বাচনে তাঁহার পছন্দের প্রার্থী বিজয় মালাকার কে জয়ী করতে তিনি রাতাবাড়িতে দু দিন ঘাটি গড়ে বসেছিলেন। সে সময়ে ও সমষ্টির মানুষ বিরোধী দলের ভূমি পুত্র প্রার্থীর বদলে তাঁর পছন্দের প্রার্থীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এতে বিজয় মালাকারের জয় সহজ হয়ে পড়ে । ২০১৬ র নির্বাচনে কৃপানাথ রেকর্ড ভোটে রাতাবাড়ির বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রতিশ্রুতির কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জোর তৎপরতা শুরু করেছিলেন। সে সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজের জন্য হরিনগর জওহর নবোদয় বিদ্যালয় সংলগ্ন ১৫০ বিঘা জমি বেছে এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি পত্র জেলা প্রশাসনের মারফত দিসপুর প্রেরণ করেছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক কৃপানাথ । কিন্তু সরকারি টালবাহানায় বিষয়টি অধরা থেকে যায়। পরবর্তী তিনি সাংসদ নির্বাচিত হয়ে দিল্লি যাওয়ার সুযোগে এ নিয়ে গোপনে তদ্বির শুরু করেন পাথারকান্দির বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। এমন কি দুই প্রাক্তন জেলাশাসক দেবেশ্বর মালাকার ও পি বি রায় কে দিয়ে তিনি পাথারকান্দির দোহালিয়া এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য জমির অনুমোদন পত্র ও চুপি চুপি দিসপুর পাঠিয়ে দেন।
রাতাবাড়ির উপনির্বাচনের আগে এ নিয়ে কানাঘুষা শুরু হওয়ায় পুনরায় প্রচারে এসে ভঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন হবে বলে তাঁর দৃঢ়তা ব্যক্ত করে যান। ফলে হিমন্তের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে রাতাবাড়ির মানুষ তাঁর পছন্দের প্রার্থী বিজয় মালাকার কে জয়ী করেন। অবশ্য বিজয় মালাকার জয়ী হওয়ার পর স্বদলীয় অপর এক বিধায়ক দ্বারা রাতাবাড়ির প্রাপ্য কেড়ে নেওয়ার দুরভিসন্ধি আঁচ করে রুখে দাঁড়ান। আর তখন থেকেই দুই বিধায়কের টানা টানি তে কোল্ড স্টোরেজে পড়ে থাকে মেডিক্যাল কলেজের বিষয়টি। তবে সম্প্রতি হিমন্তের আগমনের প্রাক মূহুর্তে এনিয়ে টাইম8 বাংলায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এবং কম্যুনিস্ট দল এ নিয়ে সরব হওয়ায় বিষয়টি পুনরায় প্রচারের আলোয় চলে আসে। ফলে রামকৃষ্ণ নগরের সভায় মন্ত্রী হিমন্ত হাসিমুখে মেডিক্যাল কলেজের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন বিজয় মালাকার ও কৃষ্ণেন্দু পালের মতানৈক্যের জন্য ই মেডিক্যাল কলেজ ঘোষণা করতে পারছেন না। একজন তাঁর ডান হাত আর অপর জন বাম হাত কাকে বিমুখ করবেন। তাই দুই বিধায়ক সাংসদ কৃপানাথ মালাহের সহযোগে ঐক্যমতে মেডিক্যাল কলেজের জন্য স্থান চয়ন করার দশ দিনের মধ্যেই তিনি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে দেবেন বলে কৌশলী মন্তব্য করে যান। এতে রাতাবাড়ি সমষ্টির নায্য প্রাপ্যতে পাথারকান্দির বিধায়কের নাক গলানো কে মেনে নিতে চাইছেন না রাতাবাড়ির শাসক বিরোধী উভয় শিবিরের নেতারা।
সিপিআই নেতা শ্রীনিবাস কর মেডিকেল কলেজ নিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার রামকৃষ্ণ নগরে দেওয়া বক্তব্যকে রাজনৈতিক ছলনা বলে আখ্যায়িত করেছেন । তিনি বলেন, যেহেতু গত বাজেটে আমাদের মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন নিয়ে একটি কড়ি ও অনুমোদন হয়নি তাহলে দুই বিধায়কের ঐক্যমত হলে দশ দিনের মাথায় তিনি কি ভাবে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে দেবেন ? বর্তমানে তিনি রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতাপশালী মন্ত্রী অর্থ দফতর ও রয়েছে তাঁরই হাতে। কিন্তু তিনি প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজ বাবদ কোন অর্থ মঞ্জুর না করে এ নিয়ে সস্তা রাজনীতি করছেন। ২০১৬ সালে মেডিক্যাল কলেজের টোপ দিয়ে রাতাবাড়ি জয় করার পর এবার কৌশলী মন্তব্য করে ঐ একই মেডিক্যাল কলেজের স্বপ্ন দেখিয়ে রাতাবাড়ি ও পাথারকান্দি আসন সুরক্ষিত রাখতে চাইছেন। কিন্তু রাতাবাড়ির মানুষের সাথে প্রতারণা করে আমাদের নায্য প্রাপ্য যেটা তিনি স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন তা নিয়ে উনার বর্তমান মন্তব্য সমষ্টির মানুষ কক্ষনো মেনে নেবেন না।
বর্তমান সাংসদ কৃপানাথ মালাহ ও রাতাবাড়ির বর্তমান বিধায়ক বিজয় মালাকারের উচিত এ নিয়ে সমষ্টির মানুষের ক্ষোভের কথা তাঁকে অবগত করে শীঘ্রই রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের স্থিতি স্পষ্ট করা। নতুবা ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না । রাতাবাড়ি যুব কংগ্রেস সভাপতি মামুন রশীদ খান আরো একধাপ এগিয়ে বলেন উভয় বিধায়ক বিজয় মালাকার ও কৃষ্ণেন্দু পালের কর্মভূমি পৃথক হলে ও বাসস্থান কিন্তু জেলা সদরে। তাই তাঁরা গোপন এজেন্ডায় দড়ি টানাটানি করছেন। যাতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়ে রাতাবাড়ি ও পাথারকান্দির পরিবর্তে জেলা সদরে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের পথ মসৃণ হয়। নতুবা রাজ্যের ক্ষমতাশালী মন্ত্রীর পাঁচ বছর আগের স্বঘোষিত রাতাবাড়ি মেডিক্যাল কলেজের স্থান চয়ন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাতই হতো না। তিনি সাফ জানিয়ে দেন ম্যাডিকেল কলেজ আমাদের নায্য অধিকার । আর রাতাবাড়ির মানুষ কে এই অধিকার হতে বঞ্চিত করার খেসারত দিতে হবে শাসক দলকে।
শুধু বিরোধীরাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপি দলের ও স্থানীয় নেতারাও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । তাদের বক্তব্য সাংসদ মালাহ আর বিধায়ক মালাকার মিলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কে দিয়ে রাতাবাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন নিয়ে স্থিতি স্পষ্ট করাতেই হবে। নতুবা একুশের নির্বাচনে জনগণ আমাদেরকে কিভাবে বিশ্বাস করবেন। তাই মেডিক্যাল কলেজ ইস্যু নিয়ে এখন চরম প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন রাতাবাড়িতে কৃপানাথ মালাহের উত্তরসূরী বিধায়ক বিজয় মালাকার সহ স্বয়ং সাংসদ মালাহ। নিজের নাম ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করাতে হলে দুজনকেই পালন করতে হবে গুরু দায়িত্ব সর্বাবস্থায় হিমন্তের পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতে রাতাবাড়ির মানুষের হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দিতে হবে মেডিক্যাল কলেজ নতুবা আগন্তুক দিনে যে এর খেসারত দিতে হবে তা আর বলার প্রয়োজন নেই ।