কলকাতা, ১৫ নভেম্বর : বিনোদন জগতে নক্ষত্র পতন।’ফেলুদা’ আর নেই। বর্ষীয়াণ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রবিবার বেলা ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। প্রবীণ অভিনেতার প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া নেমেছে বিনোদন জগতে। সারা দেশের অগণিত ভক্তরাও ভেঙে পড়েছেন। দীপাবলির রাতে শনিবারই চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসায় আর সাড়া দিচ্ছেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রতঙ্গ আর কাজ করেছে না। মাল্টি অর্গান ফেলিওরের পর সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল বর্ষীয়ান অভিনেতাকে। পূর্ণ মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা একেবারে কমে যায়। কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হার্ট কাজ করছিল না। ফলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর পর্যায় পৌঁছে।তিনি প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনা থেকে সুস্থ হলেও ক্রমেই কোমর্বিডিটির কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিক চলে যায়। অবশেষে রবিবার দুপুরে তিনি না ফেরার দেশেই পাড়ি দিলেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি। অভিনেতা হিসেবে তিনি কিংবদন্তি, তবে আবৃত্তি শিল্পী হিসেবেও তাঁর নাম অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। তিনি কবি এবং অনুবাদকও। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও বটে। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে আবির্ভূত হন তিনি। তাঁর অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র দেখে ধারণা করা হয় যে তাঁকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্য লেখা হয়। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য ও বিনোদন জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। যে শূণ্যতা কখনও পূরণ হবে না।