বৃন্দা কারাট
এর থেকে নিন্দনীয় আর কী হতে পারে! বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত যে রায় দিয়েছে তা গুরুতর অন্যায়।
যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১২০(বি) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল। ষড়যন্ত্রের মামলা। যাকে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চও মান্যতা দিয়েছিল। সিবিআই স্পেশাল কোর্টের রায়ের পর তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, দেশের শীর্ষ আদালত ভুল বলেছিল? এটা যদি ষড়যন্ত্র না হয় তাহলে ষড়যন্ত্র কাকে বলে?
প্রসঙ্গ সিবিআই কোর্টের রায় : জঘন্য একটা অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। আর আদালত সেটাকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ বলে দিল! রায় পড়তে গিয়ে বার বার চমকে উঠতে হয়। এমন সব কথা সেখানে লেখা হয়েছে। এও বলা হয়েছে, পাকিস্তান থেকে যে রিপোর্ট এসেছিল স্থানীয় ‘গোয়েন্দাদের কাছে, তার তদন্ত হয়নি কেন? এ কথাও রায়ে উল্লিখিত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে যে ঘটনাকে ‘অপরাধ’ বলেছিল, তাতে অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করে আসলে দেশের মানুষের কাছে বার্তা দেওয়া হল। সেই বার্তাটা কী? আরএসএস আর বিজেপির অ্যাজেন্ডা নিয়ে চলে তুমি যত বড় অপরাধই করো না কেন, সব মাফ। সাত খুনও মাফ!
প্রসঙ্গ লিবারহান কমিশন : বাবরি ধ্বংস নিয়ে কমিশনও বসেছিল। সমস্ত তথ্য প্রমাণ দেখে, সাক্ষ্য গ্রহণ করে লিবারহান কমিশন কঠোর ভাবে বলেছিল, মসজিদ ভাঙার ঘটনায় চক্রান্ত করেছিলেন বিজেপি, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতারা। তাঁদের ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী এত বড় অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু সিবিআই স্পেশাল কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে সেই কমিশনের রিপোর্টকেও অস্বীকার করা হয়েছে

বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা: একাধিক ঘটনা, একাধিক মামলার রায় দেখে এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় সরকার বিচার ব্যবস্থার উপর নানা ভাবে চাপ তৈরি করছে। নিজেদের মতাদর্শ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। শুধু মতাদর্শ নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে চাপ দিচ্ছে। আমরা ভুলে যাইনি, দু’বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির সেই সাংবাদিক সম্মেলনের কথা। যে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেছিলেন, কোন মামলা কোন বেঞ্চে যাবে সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার চাপ দিচ্ছে। অর্থাত্ বিচার ব্যবস্থার যে স্বাভাবিক ধারা অনুযায়ী সেটি ঠিক হয় বা হত তা বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ঘটনা হল, ওই চার বিচারকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনিও সেদিন বলেছিলেন, শীর্ষ আদালতের উপর সরকারের চাপের কথা। তিনিই অযোধ্যা মামলার রায় দিয়েছিলেন। আমি জানি না মাঝখানে কী এমন ঘটল যে মাননীয় রঞ্জন গগৈ তাঁর অবস্থান থেকে সরে এলেন। অনেকে অনেক কথা বলেন। মাঝে হেনস্থার অভিযোগেও তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু এটা ঠিক যে, সেই দিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অযোধ্যা মামলার রায়—এই যাত্রাপথে মাননীয় রঞ্জন গগৈ ইউটার্ন নিয়েছিলেন। তারপর দেখা গেল তিনি সুবিধা পেলেন (পড়ুন রাজ্যসভার সাংসদ হলেন)।
বিচারের জন্য জারি থাকবে আপসহীন লড়াই : এই রায়ের পরে আমরা সিপিআই (এম)-র পক্ষ থেকে দাবি করেছি, সিবিআইয়ের উচিত সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। কারণ ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড এভিডেন্সের’ বিরুদ্ধে এই রায়। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তে এজেন্সির উচিত এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু যে কোনও অপরাধের বিচারের দাবিতে আপসহীন আন্দোলন জারি থাকবে। তার রায় কী হবে তা না ভেবেই এই আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাব। এটাই এই কঠিন সময়ের দায়িত্ব।
(লেখক সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য, প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ)
সৌজন্যেঃ The Wall