শিলচর, ২৮ ডিসেম্বর : অসম আন্দোলনের ফসল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল মোটেই এমন কথা বলেননি। এই দাবি করেছেন শিলচরের সাংসদ ডা: রাজদীপ রায়। তাঁর কথায়, এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। সঙ্গে অবশ্য তিনি এও বলেন, একই সময়ের ব্যাপার হলেও অসম আন্দোলন এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দুটো আন্দোলনকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলার কোনও মানে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বক্তব্যকে ঘিরে বরাক উপত্যকার বৌদ্ধিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিলচরে বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজদীপ দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় অসম চুক্তির ফসল, মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলেছেন কিনা এ নিয়েও সংশয় রয়েছে তাঁর। সাংবাদিকদের সেদিনের অনুষ্ঠানের রেকর্ড পুনরায় যাচাই করে দেখা উচিত। বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের ফসল, শুধু এ কথাই বলেছেন তিনি। বিশেষ কোনও আন্দোলনের কথা তিনি উল্লেখ করেননি।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে রাজদীপকে প্রশ্ন করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বিতর্কের কথা বাদ দিয়ে যদি তাকে প্রশ্ন করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আসাম আন্দোলনের ফসল কিনা? এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কী ভাবছেন? এর জবাবে রাজদীপ বলেন, অসম আন্দোলন আর আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আসুর আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বরাক উপত্যকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আওয়াজ উঠছিল। ঘটনাক্রমে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অসম আন্দোলনের জন্য যখন তোড়জোড় চলছিল, ঠিক সেই সময় বরাক উপত্যকায়ও ছাত্র সংগঠন আকসা জোর আওয়াজ উঠাতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। দুটো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, এক আন্দোলনের সঙ্গে অন্য আন্দোলনের কোনও সংযোগ নেই। একই সময়ে ঘটেছে বলে সম্পূর্ণ পৃথক দুটো আন্দোলনকে এক সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার কোনও মানে নেই।
রাজদীপ আরও বলেন, আকসার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত ছিলেন তিনিও। তাঁর বাবা প্রয়াত বিমলাংশু রায় ছিলেন আকসার উপদেষ্টা। এছাড়া বিজেপির কর্মকর্তা নিত্যভূষণ দে এবং মিশনরঞ্জন দাসও জড়িত ছিলেন আকসার আন্দোলনে। কথার সূত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, বিজেপিই একমাত্র দল যে দল বরাকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। অন্য কোনও দল তা করেনি।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে নিয়ম ভেঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গাড়কড়ির যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অধুনা কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের (বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রক) অনুমোদন ছিল। তবে কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন, তবে এর জন্য মনমোহন সিংয়ের জমানায় কোনও পদে না থাকা সোনিয়া গান্ধী কেন জেএনইউ সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিয়েছিলেন, আগে এর জবাব দিতে বলেন তিনি। আসলে বর্তমানে সে ধরনের গ্রহণযোগ্য বিরোধী দলই নেই। সরকারের উন্নয়নের নমুনা দেখে এরা দিশেহারা। যথার্থ সমালোচনার ইস্যু না পেয়ে বিরোধীরা বর্তমানে অযৌক্তিক-আজগুবি কিছু প্রসঙ্গে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে এভাবে পাল্টা সোচ্চার হলেও রাজদীপ মেনে নেন, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি মোটেই। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশানুরূপ অগ্রগতি না ঘটলেও, শিলচর এনআইটি কিন্তু এগিয়ে গেছে অনেকটাই। এনআইটি যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেভাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেও।
আরো দেখুন : আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধী ছিল আসু ও গণ সংগ্রাম পরিষদ : নাগরিক মঞ্চ