গুয়াহাটি, ২৩ নভেম্বরঃ অসমের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আর নেই। সোমবার সন্ধা ৫টা ৩৪ মিনিটে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে গোটা রাজ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজ্য সরকার গগৈর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনদিনের রাজ্যিক শোক ঘোষণা করেছে। গত দু’দিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। কোভিড পরবর্তী জটিলতা দেখা দিলে ২ নভেম্বর ফের গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। ভর্তির পর প্রথমে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে পরবর্তীতে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। এর আগে করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমায় কোভিড আক্রান্ত তরুণ গগৈয়ের প্লাজমা থেরাপিও করেছিলেন চিকিত্সকেরা। এতে ভালো ফলও মিলেছিল। ২১ নভেম্বর শনিবার দুপুর থেকেই তরুণ গগৈয়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।অবশেষে সোমবার বিকেলে চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন।

২০০১ থেকে ২০১৬-টানা ১৫ বছর অসমের মুখ্যমন্ত্রীত্বে থাকা তরুণ গগৈয়ের জন্ম ১৯৩৪-এর সালের ১১ অক্টোবর। রাজ্যের তিনটি নির্বাচনী জয়ে দলের নেতৃত্বে থাকা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এই নেতা ২৬নং রঙ্গযান নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করেন। ১৯৬৩-তে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭২-এর ৩০ জুলাই তিনি বিয়ে করেন ডলি গগৈ-কে। তাঁদের এক ছেলে এক মেয়ে গৌরব গগৈ ও চন্দ্রিমা গগৈ। ১৯৬৮ সালে যোরহাট পুরসভা বোর্ডের সদস্য হিসাবে গগৈয়ের রাজনৈতিক কর্মজীবনের শুরু। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে তিনি লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। ২০০১ সালে অসম বিধানসভা নির্বাচনে তিতাবার কেন্দ্র থেকে জিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৬-য় বিজেপির কাছে কংগ্রেস পরাজিত হলে মুখ্যমন্ত্রীত্বের কুর্সি হারান তিনি। একটানা ৬টি লোকসভার সাংসদ ১৯৭১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যোরহাট নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রতিনিধি ছিলেন। পরে কলিয়াবোর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন ১৯৯১ ও ১৯৯৮ সালে।
যোরহাট নাজিরআলি এলাকার প্রয়াত কমলেশ্বর গগৈ ও ঊষা গগৈর সন্তান প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গগৈ রাজনীতির পাশাপাশি বই পড়তে, বাগান করতে ভালোবাসতেন। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিসেও সমান আগ্রহী ছিলেন তিনি। খেলতেন গলফও। এছাড়াও, অল অসম মইনা পারিজাত ও শিশু সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ এবং ভারত যুবক সমাজের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।তাঁর মৃত্যুতে রাজ্য একজন বলিষ্ঠ রাজনীতিককে হারাল।