আগরতলা: মনিপুরে অসম রাইফেলসের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগে এবার ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী নেতার অভিযোগ, ত্রিপুরায় বাম আমলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া সশস্ত্র সংগঠনগুলি আসন্ন এডিসি (উপজাতি স্বশাসিত এলাকা) নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জমি থেকে পুনরায় সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ধৃত জঙ্গিদের জেরার আগেই পুলিশের কাছে প্রভাবশালী মহলের চাপ আসছে বলেও অভিযোগ করেছেন মানিকবাবু।
আগরতলায় এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মানিক সরকার জানান, বাংলাদেশের ভিতরে তথা ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এলাকায় এনএলএফটি (ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা) সংগঠনের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে।এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া পানিসাগর, খোয়াইতে সম্প্রতি কয়েকজন সশস্ত্র এনএলএফটি জঙ্গি ধরা পড়ে। মানিকবাবুর ইঙ্গিত, বাম আমলে প্রায় নিষ্ক্রিয় জঙ্গিরা বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের শরিক উপজাতি দলের মদত পাচ্ছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় যাতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন মাথাচাড়া না দিতে পারে সেই দিকে নজর দিক বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কয়েকজন সদস্যের ধরা পড়ার খবর কিছু সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিষয়ে সরকারের নীরবতা চিন্তাজনক।
টানা দু দশকের বেশি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মানিকবাবুর বিস্ফোরক দাবি ছিল, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাদের দেশের অভ্যন্তরে ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে তার ব্যবস্থা নিলেও কিছু ক্যাম্প সীমান্ত এলাকায় এখনও সক্রিয়। মানিক সরকারের এই দাবির পরেই ঢাকায় শোরগোল পড়ে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জমি আর ব্যবহার করতে পারবে না ভারত বিরোধী কোনও জঙ্গি সংগঠন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বিষয়টি নিয়ে মানিকবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হয়। বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট ক্ষমতায় এসেছে।
এদিকে, ফের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় এনএলএফটি তাদের সক্রিয়তা বাড়িয়েছে বলেই গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চিত। বাংলাদেশের ভিতরে ত্রিপুরার জঙ্গি গোষ্ঠীর কিছু ক্যাম্প এখনও রয়ে গিয়েছে। সেই জঙ্গিরা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের নজর এড়িয়ে সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চল ব্যবহার করছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাম জমানায় বিশেষ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের টানা দু দশকের শাসনে রাজ্যে কোমর ভেঙে গিয়েছিল এনএলএফটি, এটিটিএফ (অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স)-এর মতো গণহত্যায় জড়িত জঙ্গি সংগঠনগুলির। বর্তমানে এরা ফের তৎপর হয়েছে বলেই অভিযোগ মানিক সরকারের।