প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন কী অসমে ব্যর্থ হতে চলেছে? বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ দেখলে এমনটাই মনে হয়।
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রকের মাধ্যমে দেশজুড়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি থেকে শুরু করে অসংখ্য ক্ষেত্রে এই উদ্যোগে কাড়ি কাড়ি অর্থও ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু অসমে দেখা যাচ্ছে এর বিপরীত চিত্র। রাজ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষকদের নিযুক্তি, চুক্তি বা বেতন ইত্যাদির দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছে সরকার। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া প্রকল্প ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক-এর মাধ্যমে অন্যান্য রাজ্যের মতো অসমেও ভোকেশনাল বা বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের নিযুক্তি হয়। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে শুরুতে অসমে মোট ৫৭টি স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সূচনা হয়। পরবর্তীতে স্কুলের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ২০১৬ সালে নিযুক্তি হয় একযোগে আরও চার শতাধিক শিক্ষকের। কিন্তু ততদিনে বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের নিয়োগ পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। রাজ্য সরকার তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ বেসরকারি হাতে নিযুক্তি থেকে শুরু করে সেই সব শিক্ষকদের পরিচালনার সব দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। আর তখন থেকে শুরু হয় নয়া সমস্যারও। রাজ্যের উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষকরা কাজ করলেও অন্যান্য শিক্ষকদের মতো তাঁরা স্থায়ী নন। বেতনও তুলনামূলক অনেক কম। অন্যান্য সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। এমনকী বেতনও নিয়মিত তাঁদের জোটে না।
এ বিষয়ে শিলচরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সারা অসম বৃত্তিমূলক শিক্ষক সংস্থার সম্পাদক জয় দে জানান, ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার ওই শিক্ষকদের নিয়োগ করলেও ২০১৬ সালে সরকারের বিশেষ নির্দেশে তৃতীয় পক্ষকে সব দায়িত্ব অ্পণ করা হয়। এর ফলে রাজ্যের বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তা চলে যায়। অনিয়মিত এবং কম বেতনের ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকী সামান্য অজুহাতে চুক্তি বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়। অথচ, কাজের বেলায় অন্যান্য বিষয় শিক্ষকদের চেয়ে যথেষ্ট বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের। শিক্ষাগত যোগ্যতাও অন্যদের তুলনায় নেহাত কম নয় তাদের।
জয় আরও বলেন, নির্বাচনের আগে শিক্ষক নিযুক্তির ধুম লেগেছে রাজ্যে। গত কিছুদিনের মধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরি হয়েছে। কিন্তু শিকে ছেড়েনি রাজ্যের বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের ভাগ্যে। তারা আজও কর্ম সুরক্ষার অভাবে ধুকছেন। এবার তৃতীয় পক্ষের হাত থেকে সরিয়ে প্রায় এক হাজার বৃত্তিমূলক শিক্ষকের নিযুক্তি সরকার কর্তৃক করার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তার হোসেন বড়ভুইয়া, বাহারুল ইসলাম, রাছমিন সুলতানা, জয়দীপ কর, অরিজিত দাস, রাজু দাস প্রমুখ।
অন্যদিকে সরকারি সূত্র অনুযায়ী, নয়া শিক্ষাবর্ষে রাজ্যে নতুন করে আরও ১৭টি বিষয়ে বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা বিকাশ পাঠ্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার যাঁরা এই শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের চাকরির যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে সরকারের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বাধ্য। আর এভাবে চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্নও যে অসমে অচিরেই দুঃস্বপ্নে পর্যবসিত হবে, তা আর বলার আপেক্ষা রাখে না।
আরো দেখুন : বন্ধুর সঙ্গে প্রতারণা, অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ হাতিয়ে নিল প্রতারক