২০০ বছর আগে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতবর্ষের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র এবং বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।যিনি আমাদের কাছে বিদ্যার সাগর, দয়ার সাগর, করুণার সাগর, সমাজসংস্কারক, শিক্ষাসংস্কারক, বিধবাবিবাহ প্রবর্তক ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইতিহাসে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশে যত বড় মানুষ, মহান সংগ্রামের যত পথ প্রদর্শক এর অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তারা সকলেই সেই যুগের নিপীড়িত অত্যাচারিত গরিব মানুষের দুঃখ ব্যাথা বুকে বহন করে মুক্তি সংগ্রামের পথ প্রদর্শন করেছিলেন, ঠিক তেমনি বিদ্যাসাগর ভারতবর্ষের বুকে নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ তথা মুর্ত মানবতাবাদের প্রতীক হিসেবে অভ্যুত্থান হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘দরিদ্রের দুঃখ কয়জন দেখিয়াছে, তাহাদের হৃদয়ের ব্যথা কয়জন বুঝিয়াছে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘জীবনের সর্বপ্রধান কর্ম ও পরম ধর্ম হচ্ছে নিছক নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নয়, নিজ দেশের হিতসাধনে অর্থাৎ নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ সাধনে সাধ্যানুসারে সচেষ্ট ও যত্নবান হওয়া।’ আমরা জানি বিদ্যাসাগর প্রথম এদেশে যতটুকু সম্ভব মানবতাবাদি আন্দোলনকে ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রযুক্তির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। তিনি ভারতীয় সভ্যতার সাথে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান সভ্যতার একটি যুক্তিভিত্তিক সংযোগ সাধন করতে চেয়েছিলেন। তাই তার বক্তব্য ছিল, ‘ছাত্রদের ইংরেজি শেখাও, জেএস মিল’এর লজিক পড়াও। সংস্কৃত শিখিয়ে কুব্জ হয়ে যাওয়া এই জাতির মেরুদন্ড খাড়া করা যাবে না। এই জাতির মেরুদন্ড খাড়া করতে হলে বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে তাকে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে আর ইংরেজি শিখলে দেশের যুবকরা তার মাধ্যমে ইতিহাস, লজিক ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হবে, ইউরোপের বস্তুবাদী দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হবে।’ তাই তিনি ব্যালেন্টাইনের মতের বিরোধিতা করে বলেছিলেন আমাদের দেশের সাংখ্য ও বেদান্ত যেমন ভ্রান্ত দর্শন, তেমনি ইউরোপের বার্কলের দর্শনের মধ্য দিয়েও ওই একই ভ্রান্ত ধারণা প্রতিফলিত হয়। আমাদের দেশের মানুষকে এইসব ভ্রান্ত দর্শনের প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। আর তাইতো সে যুগে বিধবাবিবাহ-এর মত কঠিন প্রথার প্রচলন করতে পেরেছিলেন। তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি এদেশের প্রথম আধুনিক মানুষ। ঠিক একই সুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাহার অজয় পৌরুষ, অক্ষয় মনুষত্ব। বিদ্যাসাগরের মতাদর্শ সর্বকালেই প্রাসঙ্গিক।২৬ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে এই মহান ব্যক্তিত্বের দুশোতম জন্মবার্ষিকী যথাযথভাবে পালন করছে বিদ্যাসাগর দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমিতি।