শিলচর, ৩১ আগস্টঃ মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির জন্য দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত জেইই ( মেইন ) ও এনইইটি – ইউজি পরীক্ষা কোভিড -১৯ এর ভয়াবহ সংক্রমণের সময়ে অনুষ্ঠিত না করতে পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছে এআইডিএসও। সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির আহ্বানে সোমবার শিলচরে সংগঠনের পক্ষ থেকে লকডাউন চলার প্ররিপেক্ষিতে অনলাইনে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করা হয় । এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের উৰ্ধগামী গতি থাকার সময়ে আগামী ১-৬ সেপ্টেম্বর এবং ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বেশিরভাগ ছাত্র এবং অভিভাবকরা জোরালো দাবি উত্থাপন করেছেন । কিন্তু ছাত্র ও অভিভাবকদের জোরালো প্রতিবাদকে গুরুত্ব না দিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও দেশের সরকার এবং ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি পরীক্ষা করাতে বদ্ধপরিকর । এটাও আশ্চর্যের যে সুপ্রিম কোর্ট ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের সুরক্ষার প্রশ্নকে সর্বাধিক গুরুত্ব না দিয়ে পরীক্ষা করানোর জন্য রায় দান করে । এই পরিস্হিতিতে এআইডিএসও’র আসাম রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকপত্র প্রদান করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি উত্থাপন করা হয় । স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, উভয় পরীক্ষা এপ্রিল মাসের ৫-১১ ও মে মাসের ৩ তারিখ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই সময় বর্তমানে যে সংখ্যায় সংক্রমণ ঘটছে তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক লোক সংক্রমণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের সুরক্ষার প্রশ্নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ১৮-২৩ ও ২৬ জুলাই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সংক্রমণের উর্দ্ধ গতি জুলাই মাসের শেষে থাকায় পুনরায় পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্র সরকার বাধ্য হয়, কিন্তু বর্তমানে যেখানে প্রতিদিন ৭৫০০০ বেশি সংক্রমণ ও একহাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সেই সময়ে এই পরীক্ষা করানোর ঘোষণায় দেশের ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকরা গভীর চিন্তিত । জেইই পরীক্ষায় ১০ লক্ষ ও এনইইটি- ইউজি পরীক্ষায় ১৬ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী অংশ গ্রহণ করবে,অথচ এই বিশাল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য শারীরিক দুরত্ব মেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বহু রাজ্যে ছাত্র ছাত্রীদের শারীরিক দুরত্ব মেনে বসানোর মতোও ব্যবস্থাও নেই । ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা যেসব পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হবেন, সেখানেও সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা প্রবল । এনটিএ যে এসওপি তৈরি করেছে তাতে কোনও অবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে না, কাজেই এই পরীক্ষা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বহু ছাত্র ছাত্রী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে । আসাম সহ দেশের বহু রাজ্যে আংশিক বা পূর্ণ লক ডাউন চলছে যার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে গণপরিবহনে যাতায়াত করা সম্ভব নয় । বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীদের ব্যাক্তিগত বাহন নেই , অন্যদিকে অনেকে আর্থিক কারণে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করতে অক্ষম । এরফলে বহু ছাত্র ছাত্রী বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে । এছাড়াও গণপরিবহনে যাতায়াত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক,গণ সংক্রমণের ঝুঁকি তাতে প্রচুর । আসাম, বিহার সহ বেশ কিছু বন্যাকবলিত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি । বর্তমানেও দেশের ১১ টি রাজ্যের ১৮৫ টি জেলা বন্যাকবলিত । পরীক্ষা কেন্দ্র থাকা বহু শহরে আগের দিন পৌঁছে ছাত্র ছাত্রীদের থাকার মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটুকু ব্যবস্থা রয়েছে তাও বলা কঠিন । এই অবস্থায় ছাত্র ছাত্রী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা কে করবে ? গোটা বিশ্বে অতিমারির ভয়াবহতা মানুষের মনে যে আতংকের সৃষ্টি করেছে ছাত্র ছাত্রীরা এর থেকে মুক্ত নয়, এই মানসিক অবস্থায় এন টি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা চূড়ান্ত অমানবিক । মানুষের কাছে জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নয়, এই অবস্থায় ছাত্র ছাত্রীদের জীবনকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে না দিতে স্মারকপত্রে দাবি জানানো হয়েছে ।