শিলচর, ১৩ ডিসেম্বর : কিংবদন্তি শিল্পী শুচিব্রত দেব আর নেই। গত শুক্রবার বেলা এগারোটায় তিনি কলকাতার সন্তোষপুরের নিজস্ব বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। পাশে ছিলেন দীর্ঘ সংগ্রাম সঙ্গিনী স্ত্রী অনুসূয়া দেবী। একমাত্র মেয়ে অবশ্য আমেরিকা প্রবাসী। শুচিব্রতের মৃত্যুতে কলকাতার সমকালীন শিল্পী মহলে ব্যাপক শোকের ছায়া নেমেছে। বেশ ক’বছর থেকেই প্রচন্ড শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁকে একেবারে চলাফেরা করতে বারণ করেছিলেন। এর মধ্যে ছয় মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি।তখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। শেষে শুক্রবার বেলা ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শুচিব্রত দেবের জন্ম ১৯৪০ সালে শিলচরে। পড়াশোনা শিলচর নরসিং স্কুলে।চিত্র শিল্প শিক্ষার সুতীব্র বাসনা নিয়ে আসাম সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে ১৯৫৮ সালে পাড়ি দেন শান্তিনিকেতনে। ভারতের কিংবদন্তি শিল্পী নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ বর্মন-এর মতো শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিত্রশিল্পী হিসেবে উত্থান ঘটে। শিল্পের জন্য দেশ বিদেশ ঘুরেছেন, প্রদর্শনী করেছেন। পরে কৃতিত্বের সঙ্গে চাকরি করে ভারত সরকারের চিফ ডিজাইনার হিসেবে অবসর নেন।
শুচিব্রত রবীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত ও নন্দলাল পরিচালিত কলাভবনের আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও মৌলিক সৃষ্টির সমন্বয়ের রচিত শিল্প কর্মে বিশ্বাসী। আত্মানুসন্ধানে কবিগুরুর বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশে ঐতিহ্যমণ্ডিত অথচ বিস্মৃত পরম্পরাগত কারুশিল্প ও লোকশিল্পের উন্নয়ন কর্মে লাগাতার কাজ করেছেন। গ্রামীণ চারুকলা ও চিত্রকলা নিয়ে তাঁর গভীর অনুসন্ধান তাঁকে এক গবেষকের পর্যায়ে তুলে এনেছে। শুচিব্রত দেব কলকাতার বিখ্যাত ‘পেইন্টার অর্কেস্ট্রা’ সমকালীন শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সুভদ্র, বিনয়ী, প্রজ্ঞাদীপ্ত মানুষ। ছিলেন অসাধারণ বক্তা এবং সব মহলেই বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। মৃত্যুর খবর শোনার পর কলকাতার বহু শিল্পী তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান। সবসময় পাশে ছিলেন তাঁর বন্ধু শিলচরের আরেক গুণী চিত্রকর স্বপ্নেশ চৌধুরী। শোক ব্যক্ত করেন বিশিষ্টরা।

খবর শোনার পর শনিবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য বিভাগে এক ভার্চুয়াল শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সদয়চন্দ্র দাসের পৌরোহিত্যে আয়োজিত সভায় শুচিব্রতর শিল্পী জীবনের উপর আলোকপাত করেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ গণেশ নন্দী। শিল্পীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন সহ একটি শোক প্রস্তাবও গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শিবান জি, সহযোগী অধ্যাপক ডঃ নির্মলকান্তি রায়, অধ্যাপক রুমা শর্মা, সহকারী অধ্যাপক ডঃ রাজকুমার মাজিনদার, ডক্টর রাজন বৈদ্য, ডঃ নিলাম কুমারী, গৌতম দত্ত প্রমুখ।