শিলচর, ১৫ অক্টোবর : এনআরসি’র রাজ্য সমন্বয়ক হীতেশ দেবশর্মা রাজ্যের প্রতিটি জেলার ডিআরসিআর অর্থাৎ জেলাশাসককে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে ডি ভোটার, ট্রাইবুনালের রায়ে ঘোষিত বিদেশি ও ফরেনার্স ট্রাইবুনালে মামলা রুজু থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম ছেঁটে ফেলার যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন তাতে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, আসাম। সংগঠনের সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য ও তিন সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কিশোর ভট্টাচার্য, অরুণাংশু ভট্টাচার্য ও নেকিব হুসেন চৌধুরী এক যৌথ প্রেস বার্তায় বলেন, এই নির্দেশের পেছনে রয়েছে এক গভীর চক্রান্ত। তারা বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সরকারি আধিকারিকদের দ্বারা তৈরি করা তালিকায় ত্রুটি থাকার কথা উল্লেখ করে এনআরসি’র রাজ্য সমন্বয়ক কার্যত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এনআরসি তালিকাকে বাতিল করার মন্তব্যকে সমর্থন করছেন। অথচ এইএনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পূর্বে রাজ্যের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নথিপত্র পরীক্ষার নামে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। নিজের বাসস্থান থেকে তিনশো, চারশো কিলোমিটার দূরে কোনও এক অখ্যাত গ্রামের এনআরসি’র সেবা কেন্দ্রে আবেদনকারীকে একদিন পূর্বে নোটিশ জারি করে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেখানেও তাদের নানা নথিপত্র পরীক্ষা করে, পরিবারের সব সদস্যের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার পরই এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় নাম নথিভুক্ত হয়।
এতসবের পর আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়ে নাম ছেঁটে ফেলার নির্দেশ শুধু অন্যায় ও অযৌক্তিক নয় আইনশাস্ত্র বিরোধী। আইনে যেখানে সকল নাগরিককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছে সেখানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে তৈরি তালিকা থেকে কীভাবে শুধু একটি নোটিশ জারি করে নাম ছেটে ফেলা হবে। সিআরপিসিসি’র পক্ষ থেকে এও বলা হয় যে রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইবুনালের কাজকর্ম নিয়ে যেখানে হাইকোর্ট পর্যন্ত সন্দেহ প্রকাশ করেছে সেখানে তাদের তৈরি তালিকার ভিত্তিতে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে নাম ছেটে ফেলার নির্দেশ জারি হয় কোন যুক্তিতে? সংগঠনের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে যে এনআরসি সমন্বয়কের এই সিদ্ধান্তে জনগণ আতংকিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে। রাজ্যের উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদীদের চক্রান্তের ফলে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিককে ডি ভোটার হয়ে সীমাহীন যন্ত্রণা ভুগতে হয়েছে। অনেকেই ট্রাইবুনালের একতরফা রায়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি হয়ে অমানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আবার অনেকে এই যন্ত্রণার কথা কল্পনা করে হয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন নয়তো আত্মহত্যা করেন।
এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা রাজ্যের ১৯ লক্ষ নাগরিক যখন চরম দুশ্চিন্তায় দিনযাপন করছেন ঠিক তখনই সেই তালিকায় নতুন করে আরও কিছু মানুষের নাম সন্নিবিষ্ট করার গভীর চক্রান্ত চলছ, রাজ্য সমন্বয়ক চূড়ান্ত মানবিকতাবিরোধী অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়ে অভূতপূর্ব অতিমারীতে সন্ত্রস্ত ভাষিক স্ংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভাষাবিদ্বেষ জনিত আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এই জঘণ্য মনোভাবকে ধিক্কার জানিয়ে সিআরপিসিসি, আসাম এই অন্যায় নির্দেশ কোনও অবস্থায় মেনে না নিতে জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আগামীতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতেও আবেদন জানায়।